হাবিবুর রহমান সম্রাট তালুকদার উপজেলা প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের কৃতি সন্তান, একুশে পদক প্রাপ্ত,সংগীতজ্ঞ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত কণ্ঠশিল্পী, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক লোকমান হোসেন ফকিরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) উপজেলার লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রী কলেজের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় বিশিষ্টজন ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানকে করে তোলে স্মরণীয় ও আবেগঘন।
লোকমান হোসেন ফকির ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ, যিনি ভূঞাপুর অঞ্চলের নারী শিক্ষার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তার স্নরণে ফকির মাহবুব আনাম স্বপন ভূঞাপুরে লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
লোকমান হোসেন ফকির ১৯৩৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের তৎকালীন গোপালপুর থানার অন্তর্গত ভূঞাপুরের নিকরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আমায় একজন সাদা মানুষ দাও, যার রক্ত সাদা’—ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানবতা ও মানুষকে ঊর্ধ্বে রেখে ভূপেন হাজারিকার গাওয়া বিখ্যাত এই গানের রচয়িতা ও সুরকার লোকমান হোসেন ফকির। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীতজ্ঞ ও কণ্ঠশিল্পীর ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৩ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে লালমাটিয়ায় নিজ বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তিনি ছিলেন একাধারে সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ও পরিবেশক হিসেবে কাজ করে সুখ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ২০০৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
আলোচনা পর্বে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আকন্দ'র সভাপতিত্বে এবং খন্দকার মুজাহিদ মেহেদীর সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, “লোকমান হোসেন ফকির ছিলেন এক আলোকবর্তিকা, যাঁর স্বপ্ন ছিল নারীদের শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আজ তাঁর মৃত্যুবর্ষিকীতে আমরা শুধু তাঁকে স্মরণ করছি না, তাঁর স্বপ্নকেও নতুন করে উপলব্ধি করছি।”তিনি দেশ এবং জাতীর জন্য যথেষ্ট কাজ করেছেন। তিনি ভূঞাপুরসহ একাধিক স্থানে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। তাদের দেখানো পথ অনুসরন করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে আমাদের জীবন সার্থক হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কলেজ গভর্নিং বডির প্রতিনিধি চাঁদ মিঞা বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠাকাল ধেকে এ পর্যন্ত ৩০ বার আমরা তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহ্যবাহী ফকির পরিবার এই কলেজ এবং এছাড়াও যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তারা তৈরি করেছেন আমরা ঠিক কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি আজকে সেটা মূল্যায়নের দিন। আমাদের সমাজকে পরিবর্তন, রাষ্ট্রের পরিবর্তন, আমাদের মধ্যে সম্প্রিতি ভালোবাসা, সামনে রেখে লোকমান ফকির গান রচনা করেছেন। এদেশের গরিব সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, তাদের সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি কাজ করেছেন। তাঁর অবদান এই এলাকার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। লোকমান ফকির কলেজ হলো সেই স্মৃতির স্থায়ী সাক্ষ্য।”
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন উপাধ্যক্ষ গোলাম রব্বানী রতন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যকার সালাম পারভেজ ফকির, কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁরা গর্বিত এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পেরে, যার ভিত্তি একজন মানবিক স্বপ্নদ্রষ্টার হাতে গড়া। “লোকমান স্যারকে কখনো দেখি নাই, কিন্তু কলেজের দেয়ালে দেয়ালে, শিক্ষকদের কথায় কথায় তাঁর ভালোবাসা টের পাই।”
আলোচনার পর মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
আবেগঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন যেন আবার নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিল—মানুষ চলে যায়, কিন্তু তাঁর কাজ রয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
সরোয়ার হোসেন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত