হাবিবুর রহমান সম্রাট তালুকদার
উপজেলা প্রতিনিধি
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য প্রতি কেজি ১৫ টাকা করে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এ জন্য কার্ড প্রতি ৪৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হলেও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ডিলার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে কার্ড প্রতি বাড়তি ১২০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়ে ১৯ টাকা। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি।
আর এ অভিযোগের প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ইউএনও ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার।
জানা যায়, উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের চর-শশুয়া, বাসুদেবকোল ও গোবিন্দপুর গ্রামে চাল বিক্রয়ের ডিলার মন্ডল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন। তার অধীনে ৬৯৬ জন কার্ডধারী পরিবার চাল ক্রয়ের সুবিধা পায়। আর তিনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩০ কেজি চাল ৪৫০ টাকার পরিবর্তে কার্ড প্রতি অসহায় পরিবারের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে ১২০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে ৫৭০ টাকায় ৩০ কেজি চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কার্ডধারীরা। এতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ১৯ টাকা।
এ ঘটনায় এলাকাতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে নামমাত্র কয়েকটি পরিবারকে বাড়তি টাকা ফেরত দিয়েছেন ডিলার রুহুল আমিন।
এছাড়া চাল বিক্রয়ের নির্দিষ্ট ডিলার পয়েন্ট গোবিন্দপুর বাজারে থাকলেও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে শশুয়া গ্রামে নিজ বাড়িতেই বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন ডিলার রুহুল আমিন। ফলে অতিরিক্ত ৫ কিঃমিঃ দুরে গিয়ে চাল ক্রয় করতে হচ্ছে কার্ডধারীদের। এতে শারিরিক ও আর্থিক ভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সুবিধাভোগীরা।
কার্ডধারী লিয়াকত বলেন, আমি পরিবার নিয়ে কোনরকম ভাবে দিনাতিপাত করি। রোজগার কম থাকায় কার্ড দিয়ে সরকারি চাল কিনি। তবে গতকাল ডিলার রুহুলের বাড়ি থেকে ৪৫০ টাকার চাল কিনতে হয়েছে ৫৭০ টাকায়। উর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন ডিলারের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন কার্ডধারী বলেন, ডিলার রুহুলের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। চালের ওজন কম দেয়া, অল্প কিছু কার্ড নামমাত্র বিতরণ করে সিংহভাগ চাল খোলা বাজারে বিক্রি সহ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করে ডিলার রুহুল আমিন। তার অন্যায়ের শাস্তি হওয়া দরকার।
বাসুদেবকোলের কার্ডধারী মুস্তাকিনের ছেলে রাসেল বলেন, গতকাল বুধবার ডিলারের বাড়ি দুরে থাকায় আমি আমার বাবা ও চাচাদের মোট ৪টি পরিবারের কার্ড নিয়ে চাল কিনতে যাই। পরে প্রতিটি কার্ডে ১২০ টাকা করে বেশি দিয়ে চাল কিনে আনি। বাড়িতে এসে পরিবারকে জানাই পরে তারা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। পরে সেদিন রাতেই আমাদের ৪ টি কার্ডে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয় ডিলার রুহুল। এ বিষয়টি কাউকে কিছু না বলার অনুরোধও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ট্যাগ অফিসার মাসুদুল হক বলেন, চাল বিক্রির স্থান দুরে হওয়ায় আমার ডিলার পয়েন্টে যেতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। ওই সময়টাতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমি উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে সঠিক ভাবেই চাল বিক্রি হয়েছে।
নিজ বাড়িতে বেশি দামে চাল বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত মন্ডল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন বলেন, বেশি নয় সঠিক দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। আর আমার বাড়ি থেকেই চাল বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে চেয়ারম্যান, খাদ্য কর্মকর্তা ও ইউএনও।
অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ইউএনও মহোদয় আমার উপস্থিতিতে ডিলার রুহুলকে গোবিন্দপুর বাজারে চাল বিক্রির কথা বলেছেন। তার বাড়িতে বেশি দামে চাল বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই, খোজ নিয়ে বলতে পারবো।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলেন, ডিলারের নিজ বাড়িতে বেশি দামে চাল বিক্রির বিষয়টি ইতিমধ্যে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মুঠোফোনে জানতে পেরেছি। শীগ্রই তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ পপি খাতুন বলেন, ঘটনার বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।
সরোয়ার হোসেন কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত