মোঃ নেওয়াজ মোর্শেদ নোমান, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটে সাংবাদিক আবু রায়হান ও ছাত্রদলের ৬ নেতাকর্মীর নামে থানায় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। গতকাল ৬ এপ্রিল আক্কেলপুর থানায় মামলাটি করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাড. সাক্কু চৌধুরীর স্ত্রী তানজিলা বিনতে রহমান। জয়পুরহাট জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট ও আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সাক্কু চৌধুরীর পক্ষে নিউজ না করায় তার স্ত্রীকে দিয়ে তিনি এ মিথ্যা মামলা করিয়েছেন অভিযোগ ভুক্তভোগী সাংবাদিকের। এদিকে কোন তদন্ত ছাড়াই মামলাটি রেকর্ড করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকরা।
মামলার অন্য আসামীরা হলেন, আক্কেলপুর পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নাসিফ নেওয়াজ রমিম, ছাত্রদল নেতা অপূর্ব চৌধুরী, মো. আশ্বিন, সুইট, আলিম ও ব্যবসায়ী মাসুদ।
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক আবু রায়হান বলেন, ২০২৪ সালের জুন মাসে সাক্কু চৌধুরী তার পক্ষে মিথ্যা নিউজ করার কথা বললে আমি তাতে অস্বীকৃতি জানাই। এরই জেড় ধরে সে আমার ক্ষতি করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আ. লীগ নেতা এ্যাড. সাক্কু চৌধুরীর ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জার থেকে আমার মেসেঞ্জারে ভয়েজ রেকর্ডের মাধ্যমে বলেন, ‘আমি জানি যেদিন আমার রিপোর্টটি করোনি বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল। আমি আওয়ামী লীগের আক্কেলপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছে, সংসদ ভেঙ্গে যায়নি। অবৈধ সরকার ইউনুস পাকিস্তানসহ কিছু রাষ্ট্রের মদদে অবৈধ ভাবে আগলিয়ে রেখেছে সবকিছু। অবৈধ অবৈধই। চলে যেতে হবে একদিন, ফিরে আসবে হাসিনা। বসবে আবার সংসদ।’ এছাড়া তিনি বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। এ ঘটনায় আমি ৬ মার্চ জয়পুরহাট থানায় একটি জিডি করলে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ঈদের ছুটির পর ৬ এপ্রিল তার স্ত্রী তানজিলা বিনতে রহমানকে দিয়ে আমাকে ১নং আসামীসহ ৭জনকে আসামী করে ৪৪৮/ ৩২৩/ ৩৮০/ ৩৮৫/ ৩৮৯/ ৪২৭/ ৫০১/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
আক্কেলপুর পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নাসিফ নেওয়াজ রমিম জানান, সাংবাদিক রায়হান ব্যতিত যাদের আসামী করা হয়েছে তারা ছাত্রদল নেতাকর্মী। আজকে এই নতুন বাংলাদেশে ভাবতে অবাক লাগছে এখনও মিথ্যা ও হয়রানিমুলক ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর সাক্কু চৌধুরী তার স্ত্রীকে দিয়ে এই মামলাটি করিয়েছেন। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ছাত্রদলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই আওয়ামী দোসর এই কাজ করেছেন।
আক্কেলপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহিনুর রহমান হামিদ বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তদন্ত ছাড়াই একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে মামলা রেকর্ড করেছেন ওসি। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা জেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলায় দেওয়ায় ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবে সাংবাদিকরা।
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে দেশবিরোধী কথা বলায় সাক্কু চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। সেই সাথে আক্কেলপুর থানার ওসি বিষয়টি তদন্ত না করে কেন এই মামলা রেডর্ড করলেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বাদির সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি। তবে তার স্বামী এ্যাড. সাক্কু চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, ১ নং ও ২নং আসামী চাঁদা চাওয়া মানহানিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। সত্যতা উৎঘাটন করার চেষ্টা করেন।
মুঠোফোনে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিলে তিনি বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা না পেলে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট বা আসামীদের বাদ দেওয়া হবে।
সাক্কু চৌধুরীর ভয়েজ রেকর্ড দেওয়া আছে (ডিজিটালে চালানো যাবে)