তানিম আহমদ, স্টাফ রিপোর্টার,
পবিত্র রমজান মাস আত্মসংযম, দানশীলতা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এই পবিত্র মাসে দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি এক অনন্য মানবিক উদ্যোগও। এই লক্ষ্যে সমাজসেবামূলক সংগঠন “মাটি ও মানুষ ফাউন্ডেশন” এবারও অসহায় পরিবারের জন্য ইফতার সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সংগঠনটির উদ্যোগে ১৫০টি সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের জন্য ইফতার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে, যাতে প্রতিটি পরিবারের জন্য ছিল প্রয়োজনীয় ১২টি খাদ্য সামগ্রী। স্থানীয় ও প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।
রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই মাটি ও মানুষ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁরা এবারও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন। প্রথমেই সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নআয়ের মানুষের একটি তালিকা তৈরি করা হয়, যাতে প্রকৃত অভাবী পরিবারগুলোর হাতে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়। এরপর প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ এবং প্যাকেট তৈরির কাজ শুরু হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে যারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন
মামুনুর রশিদ তরফদার, ময়নু হোসেন (ইরফান), রুয়েল আহমেদ, আব্দুল হাদী (রাফি),মাহিন খান (লিটু), মো. আফজল খান, তাইদুল আমিন, মো. জুবায়ের আহমেদ, মো. আব্দুল্লাহ, আলী মোহাম্মদ প্রমুখ।
তাঁরা প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিতরণ কার্যক্রম সফল করতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
ইফতার সামগ্রীর তালিকা ও উপকারভোগী পরিবারগুলোর প্রতিক্রিয়া:
প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রস্তুতকৃত প্যাকেটগুলোতে অন্তর্ভুক্ত ছিল—
✅ চানা
✅ ডাল
✅ তেল
✅ পেঁয়াজ
✅ গরম মসলা
✅ রসুন
✅ আদা
✅ খেজুর
✅ ছোলা
✅ চিনি
✅ লবণ
✅ মুড়ি
এই খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের সময়ই স্বেচ্ছাসেবকরা নিশ্চিত করেছেন যে, প্রতিটি আইটেম উচ্চমানের এবং উপভোগ্য হবে।
একজন সুবিধাভোগী রওশন আরা বলেন,
“রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতার যোগাড় করা আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই ইফতার সামগ্রী পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। আল্লাহ যেন এই সংগঠনের সকল সদস্যকে ভালো রাখেন।”
আরেকজন সুবিধাভোগী শফিকুল ইসলাম জানান,
“আমি একজন দিনমজুর। রমজানের সময় কাজ কমে যায়, তাই পরিবারের জন্য ইফতার জোগাড় করাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এই ইফতার সামগ্রী আমাদের জন্য বড় সহায়তা।”
এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে শুধু স্থানীয়রাই নয়, প্রবাসীরাও বড় ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে এ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের আর্থিক অনুদানে এই বিশাল আয়োজন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রবাসীদের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই এত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। আগামী বছরেও এই উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এবারের ইফতার বিতরণ অনুষ্ঠানটি একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিতরণ কার্যক্রম নির্দিষ্ট একটি স্থানে আয়োজন করা হয় এবং পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রত্যেককে ইফতার সামগ্রী দেওয়া হয়। বিশেষভাবে দরিদ্র এবং কর্মক্ষম ব্যক্তি যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
এটি শুধুমাত্র ইফতার বিতরণের একটি আয়োজন ছিল না, বরং এটি ছিল এক অন্যরকম ভালোবাসার প্রকাশ।
সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মামুনূর রশিদ তরফদার বলেন, ” আমরা ২০১৮ সাল থেকেই এই কার্যক্রমগুলো করে আসছি।দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই আমাদেরকে সর্বদা সাহায্য সহযোগিতা, পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে পাশে দাড়িয়েছেন।আমি সবার কাছে দোয়া চাই, আগামি দিনগুলোতেও যেন আমরা একইভাবে সকলের পাশে দাড়াতে পারি এবং সকলের ভালোবাসায় আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি”।
মাটি ও মানুষ ফাউন্ডেশন শুধু ইফতার বিতরণই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। সংগঠনের মূল লক্ষ্য হলো—
,সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও বৃত্তি প্রদান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা।
ফাউন্ডেশনের এক সদস্য বলেন,
“আমরা শুধু রমজান মাসেই নয়, সারা বছর ধরে মানুষের পাশে থাকতে চাই। সমাজের বিত্তবানদেরও অনুরোধ করবো, তাঁরা যেন এই ধরনের মানবিক কাজে এগিয়ে আসেন।”
রমজান মাস সংযম ও দানশীলতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করেই “মাটি ও মানুষ ফাউন্ডেশন” অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই উদ্যোগ শুধু ইফতার সামগ্রী বিতরণই নয়, বরং এটি দানশীলতা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ ধরনের উদ্যোগ সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে—এটাই সবার প্রত্যাশা।