এ.কে পলাশ কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় মাদক ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের মাদক বিরোধী কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শিথিলতা সহ নানা কারনে সাম্প্রতিক সময়ে জেলার চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক কারবারিদের তৎপরতা বেড়েছে আশংকাজনক ভাবে। এদিকে অনেকেই বলছেন মাদক ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার কারনে ফের ডিএনসির মাদকবিরোধী চলমান অভিযান ও মাদক প্রতিরোধে নানামূখী কার্যক্রম প্রাথমিক ভাবে থমকে গিয়েছে। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন দপ্তর ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে নানা জল্পনা কল্পনারও সৃষ্টি হয়েছে। ডিএনসির নানামুখি মাদক বিরোধী অভিযান থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ডিএনসি সদস্যদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলা করেও পাড় না পেয়ে নানামুখি চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে প্রভাবশালী মাদক ডিলাররা। জেলার সদর ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সীমান্তের শীর্ষ ও চিহ্নিত মাদক কারবারিদের মুল টার্গেটে পরিনত হয়েছে তাদের মাদক বাণিজ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টিকরা উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসানসহ ডিএনসির সদস্যরা। নানা কৌশলে মাদকবিরোধী কার্যক্রম ও অভিযান বন্ধ করতে চক্রান্ত করে যাচ্ছে জেলার শীর্ষ মাদক কারবারিদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
জানা যায়,সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে দেশে অবৈধ মাদক অনুপ্রবেশের অন্যতম রুট কুমিল্লা। জেলার ১০৫ কিলোমিটার এলাকাজুরে রয়েছে ভারত সীমান্ত। এই সীমান্ত সংলগ্ন ৫ উপজেলার শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে নানা উপায়ে ভারতীয় মাদক ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, আইস, টাপেন্টাডল, বিয়ার সহ নানা ধরনের মাদক প্রবেশ করে দেশে। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘসময় ধরে বিভিন্ন চিহ্নিত সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছক অবৈধ মাদক চোরাচালান ও ব্যবসা। ডিএনসি সুত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে কুমিল্লায় বিভিন্ন পর্যায়ের মাদক কারবারি অপরাধীরা গ্রেফতার হলেও মাদকের মূল গডফাদাররা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কুমিল্লা ডিএনসির উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে মাদকবিরোধী নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালিত হয়। একেরপর এক সাড়াশি অভিযান চালানো হয় মাদক কারবারিদের আস্তানা ও মাদক ডিলারের ডেরায়। এতেকরে অনেক প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের গডফাদার ডিএনসি কুমিল্লা কর্তৃক গ্রেফতারও হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশ তৎপরতা কম থাকায় মাদক কারবারিদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের কারন হয়ে ওঠে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এছাড়া বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বেপরোয়া মাদক কারবারিদের হামলার শিকারও হয়ে আহতও ডিএনসির সদস্যরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভয় ভীতি দেখিয়ে এবং হামলায় ব্যার্থ হয়ে প্রভাবশালী মাদক কারবারিরা কুমিল্লা ডিএনসির উপপরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসানসহ ডিএনসির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা শুরু করে নানামুখি ষড়যন্ত্র। হুমকি ধামকি হমালা ষড়যন্ত্রে দমাতে না পারলেও অবশেষে ভিন্ন পথে হাটে মাদক কারবারিরা।
চক্রান্তের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয় গণমাধ্যমকে। কতিপয় গণমাধ্যম কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে বা ভিন্ন পন্থায় মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। মূলত মাদক কারবারিদের জন্য বর্তমানে মূর্তিমান আতঙ্ক জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে ঠেকাতে প্রভাবশালী মাদক কারবারি সিন্ডিকেট এসব অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপপরিচালক হিসেবে চৌধুরী ইমরুল হাসান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ে যোগদানের পর হতে বদলে গেছে জেলা কার্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম। জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মাদকবিরোধী অভিযানের সংখ্যা, মামলার সংখ্যা, গ্রেফতারকৃত আসামির সংখ্যা ও জব্দকৃত আলামতের পরিমাণও। শুধু মাদক বিরোধী অভিযান গ্রেফতার কিংবা মাদক জব্দের পরিমানই বাড়েনি। একইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং মাদক নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসার গুণগত মান। তাঁর এসব কার্যক্রম কুমিল্লা জেলার সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আর এসব কার্যক্রম রুখে দিতেই উঠেপড়ে লেগেছে ক্ষতিগ্রস্ত মাদক চোরাকারবারিরা।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের স্বীকার এ কার্যালয়ের কর্মচারীরা। এধরণের ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। এসব হরহামেশাই মোকাবেলা করে চাকরি করতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মাদক কারবারিরা চক্রান্ত করবে নানা ভাবে এটাই স্বাভাবিক। কাজের ক্ষেত্রে কিছু ভুল হতে পারে, তবে ভুল এবং অপরাধ দুটোই আলাদা বিষয়। জেনে শুনে কখনোই কোন অপরাধ করিনি কিংবা কোন অন্যায় কাজে নিজেকে জড়াইনি। সর্বদা সৎ থেকে সততার সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। এ দপ্তরের সদস্যদের প্রতি মিথ্যাচার করা হয়েছে। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে অধিকতর জাচাই বাছাই করে সঠিক সংবাদ পরিবেশনই প্রত্যাশা করে সচেতন নাগরিকরা। অবৈধ মাদক কারবারি চোরাচালান সিন্ডিকেট যত চতুর বা শক্তিশালী হোক না কেন আইনের চোখে ধুলো দিয়ে বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।